বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬

তথ্য, ধারণা ও জ্ঞান

সম্প্রতি আমি এই অনুভূতি ও উপলদ্ধিতে উপণিত হলাম যে- প্রায়শঃয়ই যে কোন বিষয়ে আলোচনা, সমালোচনা এবং তর্ক বিতর্ক সত্য উদঘাটন না করে তা বিষয়কে জটিল ও দূরহ করে তুলছে এবং বিতর্কের ভিন্ন ভিন্ন পক্ষদের মাঝে অতি তিক্ততার জন্ম দিচ্ছে। এবং এর মূলে হয়তো একাধিক কারণ থাকতে পারে তবে আমার কাছে যা মূল কারণ বলে মনে হয় তা হচ্ছে- তথ্য, ধারণা ও জ্ঞান এই তিনটি বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট উপলদ্ধি না থাকা এবং এগুলোকে গুলিয়ে ফেলা।

আবার আমরা বেশিরভাগ সময় অনেক তথ্য জানে এরকম ব্যক্তিকে অনেক বড় জ্ঞানি মনে করি। আসলে যিনি অনেক তথ্য জানেন তাকে তথ্যাভিজ্ঞ বলা যেতে পারে। জ্ঞানও তার আছে, থাকবে এটাই স্বাভাবিক তবে তিনি জ্ঞানির চাইতে অধিক তথ্যাভিজ্ঞ। আমাদের সমাজে বা পৃথিবীতে তথ্যাভিজ্ঞ অনেক অনেক তবে জ্ঞানির সংখ্যা এখনও খুব বেশি নয়।

আসুন বিষয়গুলোকে সুস্পষ্ট করা যাক। প্রথমেই আসি তথ্য সম্পর্কে-

তথ্য
তথ্য হচ্ছে মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয় সাধারণভাবে যা উপলদ্ধি করে।

ধারণা
মানুষ তথ্যকে হৃদয়, মন ও বুদ্ধি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে সেই তথ্যের নানামুখি সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো কে ধারণা বলা যায়।

জ্ঞান
কোন তথ্যের সম্ভাব্য সকল ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার একটিকে একমাত্র সঠিক, সর্বাধিক সঠিক কিম্বা আপাত সঠিক হিসেবে নির্ণয় করলে তা জ্ঞান বলে বিবেচিত।
নিউটনের মহাকর্ষ শক্তির আবিষ্কারের ঘটনা দিয়েই বিষয়টিকে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে।

যেমন- নিউটন আপেল গাছের তলায় বসে আপেল পড়তে দেখলো। এটিযে সে সেদিনই দেখেছিল তা কিন্তু নয়। জীবনে সে বহুবার এটিকে দেখেছে। আপেল বা যে কোন ফল বা পাতা গাছ থেকে ছিড়ে গেলে তা মাটিতে পড়ে এটি একটি তথ্য। কিন্তু যখন সে প্রশ্ন করল নিজেকে যে আপেলটি উপরে কেন গেলনা, বা ডানে বামে কেন গেলনা, নীচে কেন পড়ল? তখন সে ধারণার দরজা উম্মুক্ত করল। অর্থাৎ তথ্যের উপরে প্রশ্ন করে তার উত্তর অনুমান করার নাম ধারণা। যেমন নিউটন প্রথম ধারণা করল হয়তো উপরে একটি শক্তি আছে যা সবকিছুকে নিচের দিকে ঠেলে দেয়। আবার ধারণা করলো ডান-বাম, সম্মুখ-পেছন, উপর সব দিকই হয়তো সবকিছুকে ঠেলে নিচে দেয়। আবার ধারণা করলো- না পৃথীবির বা পৃথিবী পৃষ্ঠের হয়তো একটা শক্তি আছে যা সবকিছুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এই সবগুলোই হচ্ছে ধারণা। কিন্তু সে সকল ধারণাগুলোকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলো যে সর্বশেষ ধারণাটিই সঠিক। তাই সর্বশেষ ধারণাটি জ্ঞান।


এটিকে যদি বস্তুগতভাবে বোঝার চেষ্টা করি তবে একটি মোমবাতির উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাবে। মোমবাতির মোমগুলো তথ্য, সলতেটি ধারণা এবং আগুন হলো জ্ঞান। অর্থাৎ কোন বিষয়ে জ্ঞানি ব্যক্তি ইচ্ছে করলে সে বিষয়ে সকলকে জ্ঞান দিতে পারবে না কিম্বা সকল ব্যক্তিই জ্ঞানি ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তৎক্ষণাৎ জ্ঞান গ্রহণ করে জ্ঞানি হতে পারবে না প্রথম তাকে সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য ও ধারণার অধিকারি হতে হবে। যেমন আমরা ইচ্ছে করলেই একটি শিশুকে জ্ঞান প্রদান করতে পারিনা কারণ তারা প্রচুর তথ্য ও ধারণার সাথে পরিচিত নয়। তাই বিভিন্ন জ্ঞান প্রদান করার জন্য একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আবার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেও অনেকে জ্ঞানের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে যদি সে সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য ও ধারণার অধিকারি না হয়।